লিভার ন’ষ্ট হওয়ার এক বছর আগে শরীর যে সংকেত দেয়, জেনে নিন
লিভার বা যকৃত মানবদেহের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা হজম, রক্ত পরিশোধন, টক্সিন অপসারণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য অপরিহার্য। লিভার নীরবে তার কাজ করে যায় বলে এর মারাত্মক ক্ষতি না হওয়া পর্যন্ত অনেক সময় লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় না। তবে লিভার পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার আগে শরীর কিছু নির্দিষ্ট সতর্ক সংকেত দিতে শুরু করে।
লিভারের অবস্থা খারাপ হওয়ার বা মারাত্মক ক্ষতির আগে শরীর যে ৭টি সতর্ক সংকেত দেয়, তা নিম্নরূপ:
১. জন্ডিস (Jaundice) বা ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া
এটি লিভার নষ্ট হওয়ার সবচেয়ে পরিচিত লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম। লিভার যখন রক্ত থেকে বিলিরুবিন (পুরোনো লোহিত রক্তকণিকা ভাঙার ফলে সৃষ্ট বর্জ্য) অপসারণ করতে পারে না, তখন এটি রক্তে জমা হতে শুরু করে।
লক্ষণ: ত্বক, চোখ (বিশেষ করে চোখের সাদা অংশ) এবং নখের রং হলুদ হয়ে যায়।
২. পেটে ফোলাভাব ও ব্যথা (পেটে জল জমা)
লিভারের সমস্যার কারণে পোর্টাল হাইপারটেনশন (লিভারের রক্তনালীতে উচ্চ রক্তচাপ) হতে পারে, যা পেটে তরল জমা করে। এই অবস্থাকে অ্যাসাইটিস (Ascites) বলা হয়।
লক্ষণ: পেট অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যাওয়া, এবং পেটের ডান দিকে পাঁজরের নিচে (যেখানে লিভার থাকে) ভোঁতা ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করা।
৩. অস্বাভাবিক ক্লান্তি ও দুর্বলতা
লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে শরীর টক্সিন ভালোভাবে পরিশোধিত করতে পারে না। ফলে শরীরে শক্তির মাত্রা কমে যায় এবং বিষাক্ত পদার্থ জমা হওয়ায় সব সময় অস্বাভাবিক ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভূত হয়।
৪. সহজে কালশিটে পড়া বা রক্তপাত হওয়া
স্বাস্থ্যকর রক্ত জমাট বাঁধার জন্য লিভার কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন তৈরি করে। লিভার নষ্ট হতে শুরু করলে এই প্রোটিন তৈরি কমে যায়, ফলে ছোটখাটো আঘাত লাগলেই সহজে ত্বকে কালশিটে পড়ে বা আঘাতের স্থান থেকে অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে।
৫. ত্বকে চুলকানি ও র্যাশ
লিভারের সমস্যা হলে ত্বকের নিচে পিত্ত লবণ (bile salt) জমা হতে শুরু করে।
লক্ষণ: কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই সারা শরীরে অসহনীয় চুলকানি অনুভূত হওয়া এবং কখনো কখনো ত্বকে লালচে ছোপ বা র্যাশ দেখা দেওয়া।
৬. প্রস্রাব ও মলের রঙের পরিবর্তন
লিভারের কার্যকারিতা কমে গেলে মলের রঙ ফ্যাকাশে বা মাটির মতো (Clay-coloured) সাদাটে হয়ে যেতে পারে, কারণ মল থেকে বিলিরুবিন বের হয় না। অন্যদিকে, বিলিরুবিন প্রস্রাবের মাধ্যমে বেশি পরিমাণে বের হতে শুরু করলে প্রস্রাবের রং গাঢ় হলুদ বা কমলা হয়ে যেতে পারে।
৭. হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি (মানসিক বিভ্রান্তি)
গুরুতর লিভারের রোগে, রক্তে টক্সিন (যেমন অ্যামোনিয়া) মস্তিষ্কে পৌঁছাতে শুরু করে।
লক্ষণ: স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা, মনোযোগের অভাব, ঘুম-ঘুম ভাব, অলসতা এবং গুরুতর ক্ষেত্রে ব্যক্তিত্ব বা আচরণের পরিবর্তন (যেমন: বিভ্রান্তি, কথা জড়িয়ে আসা বা ভুলে যাওয়া)।
এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং লিভারের কার্যকারিতা পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি।
Bongofact