সর্বশেষ

ক্রিকেট বিশ্বে শো’কে’র ছায়া, যে ভাবে মা”রা গেলেন ভারতের তারকা ক্রিকেটার প্যাটেল

মাত্র ২৩ বছর বয়স। জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল স্বপ্নগুলো চোখে নিয়ে আকাশে পা রেখেছিলেন দীর্ঘ প্যাটেল। সামনে ছিল লন্ডনের গন্তব্য, যেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি বল হাতে মাঠ কাঁপানোর অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস—আকাশে ডানা মেলতেই থেমে গেল তাঁর স্বপ্নের উড়ান।

গত ১২ জুন আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট এআই-১৭১ ওড়ার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয় পাশের একটি মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলের ছাদে। আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যায় বিমানটি। প্রাণ হারান ২৪২ আরোহীর মধ্যে ২৪১ জনই। এই মৃত্যুমিছিলে ছিলেন উদীয়মান অলরাউন্ডার দীর্ঘ প্যাটেলও—যার জন্য গোটা ক্রিকেটজগৎ এখন ভারাক্রান্ত।

দীর্ঘ ছিলেন গুজরাটের ছেলে। কিন্তু জীবন আর ক্রিকেটের স্বপ্ন তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ডের লিড্‌সে। সেখানকার মডার্নিয়ান্স ক্লাবের হয়ে নিয়মিত খেলতেন তিনি। শুধু খেলার নয়, পড়াশোনাতেও ছিলেন মেধাবী—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে পড়তেন। দিনে পড়াশোনা, সন্ধ্যায় অনুশীলন—দুটো জীবন একসাথে আগলে রাখছিলেন দীর্ঘ।

লিড্‌সের ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দীর্ঘের মৃত্যুতে তারা বাকরুদ্ধ। এক বিবৃতিতে তারা বলে, “দীর্ঘ শুধু একজন খেলোয়াড় ছিলেন না, ছিলেন আমাদের পরিবারের অংশ। তাঁর প্রাণবন্ত উপস্থিতি, পরিশ্রম আর হাসিমুখ আজও মাঠে ভাসছে আমাদের চোখে। এই শূন্যতা কখনোই পূরণ হবে না।”

এয়ারডেল অ্যান্ড হোয়ারফেডাল সিনিয়র ক্রিকেট লিগ, যেখানে দীর্ঘ খেলতেন, তার মুখপাত্র জানান, “তার মধ্যে অসাধারণ প্রতিভা ছিল। ওর ভাই একসময় খেললেও, দীর্ঘ ছিল আরও বড় সম্ভাবনার নাম। আমরা বিশ্বাস করতাম, ও একদিন অনেক দূর যাবে।”

দুঃখজনকভাবে সেই ‘অনেক দূর’ আর পৌঁছানো হলো না দীর্ঘের। লন্ডনের গ্যাটউইক নয়, তাঁর যাত্রা থেমে গেল আহমেদাবাদের আকাশেই। বিমানের ধ্বংসস্তূপে শুধু একটি দেহ নয়, হারিয়ে গেল একটি সম্ভাবনা, একটি স্বপ্ন, একটি আগামী।

এ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে এখনো তদন্ত চলছে। কিন্তু তাতে দীর্ঘকে আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। যাঁরা তাঁকে চেনেন, তাঁরা জানেন—এই ছেলেটির চোখে ছিল খেলা আর জ্ঞান দুইয়ের জন্যই অপার আকর্ষণ। একহাতে ব্যাট, অন্যহাতে ভবিষ্যতের প্রযুক্তির চাবিকাঠি—দুই দিকেই সমান দক্ষ ছিলেন তিনি।

আজ মাঠ শূন্য, ড্রেসিংরুম নিঃসাড়, বন্ধ হয়ে গেছে একটি তরুণ হৃদয়ের স্পন্দন। দীর্ঘ প্যাটেল আর নেই, কিন্তু তাঁর স্বপ্ন, তাঁর প্রতিভা, তাঁর অসমাপ্ত গল্প রয়ে যাবে ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে, এক অপূরণীয় ক্ষতির অনুরণন হয়ে।

শেষবারের মতো দীর্ঘ আকাশে উঠেছিলেন, হয়তো নিজের স্বপ্ন ছুঁতে। দুর্ভাগ্য, সেই আকাশই কেড়ে নিল তাঁকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *