সর্বশেষ

মা”রা গেলেন ভারতের জনপ্রিয় তারকা স্পিনার, ক্রিকেট বিশ্বে শোকের কালো ছায়া

ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে এমন কিছু চরিত্র আছেন, যারা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু না হয়েও নিজের নিপুণতায় হয়ে উঠেছেন অনন্য। দিলীপ দোশী ছিলেন ঠিক তেমনই এক নিঃশব্দ যোদ্ধা। ৭৭ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ভারতের সাবেক এই বাঁহাতি স্পিনার। তার মৃত্যুতে যেন চুপসে গেছে ভারতীয় স্পিন ঘড়ির এক মূল্যবান কাঁটা।

দোশীর জন্ম ১৯৪৭ সালের ২২ ডিসেম্বর, গুজরাটের রাজকোটে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে পা রাখেন অনেক দেরিতে—পুরো ৩২ বছর বয়সে। তবে সেই দেরি যেন তাকে আরও প্রস্তুত করেছিল। ১৯৭৯ সালে চেন্নাই টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেকেই তুলে নেন ৬ উইকেট। ১০৩ রান দিয়ে ইনিংসের পাঁচ উইকেট শিকার করেন, ভারতের ইতিহাসে যা করতে পেরেছেন মাত্র নয়জন বোলার। সেই তালিকায় নিজের নাম খোদাই করে নেন দোশী।

টেস্ট খেলেছেন মাত্র ৩৩টি, তবু উইকেট শিকার ১১৪টি। ১৫টি ওয়ানডে থেকে তার ঝুলিতে ২২ উইকেট। তিনি ছিলেন এমন এক স্পিনার, যিনি প্রতিপক্ষের আস্থাকে চুপিচুপি কেটে ফেলতেন ধারালো বল ঘুরিয়ে। তার বোলিংয়ে ছিল না তিলকধারী চিৎকার, ছিল নিখুঁত ধৈর্য আর সংযমের ছাপ।

দোশী ভারতীয় স্পিন চারমূর্তির (প্রসন্ন, চন্দ্রশেখর, বেঙ্কটরাঘবন, বেদি) পরবর্তী উত্তরাধিকার। যখন এই কিংবদন্তিরা বিদায় নিচ্ছিলেন, তখন তিনি এসে স্পিন আক্রমণের হাল ধরেন। ভারতীয় দলে তার অবদান যতটা পরিসংখ্যানে ধরা পড়ে, তার চেয়েও বেশি অনুভবে।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। বাংলা ও সৌরাষ্ট্রের হয়ে খেলা ছাড়াও, ইংল্যান্ডের নটিংহ্যামশায়ার এবং ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেটে মাঠ কাঁপিয়েছেন। তার প্রথম শ্রেণির উইকেটসংখ্যা ৮৯৮—একটি সত্যিকারের পরিশ্রমী ও নিখুঁত বোলারের ছাপ বহন করে।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। গত মাসেও লন্ডনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে। বোর্ডের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেও দেখা গিয়েছিল তাকে। ক্রিকেটের প্রতি তার ভালোবাসা শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত অটুট ছিল।

তার প্রয়াণে শোক জানিয়েছেন অনিল কুম্বলে, যিনি নিজেও ভারতীয় স্পিনের আরেক কিংবদন্তি। এক্স হ্যান্ডেলে কুম্বলে লেখেন, “দীলিপ ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ হৃদয়বিদারক। ঈশ্বর তার পরিবার ও পরিজনদের এই দুঃসময়ে শক্তি দিক।”

দিলীপ দোশী ছিলেন না আলো ঝলমলে বিজ্ঞাপন কিংবা হেডলাইনের মানুষ। কিন্তু যারা ক্রিকেটকে সত্যিকারের খেলার চোখে দেখেন, তাদের কাছে তিনি ছিলেন এক স্পিন শিল্পী—নীরব, নিবেদিত, নিখুঁত।

আজ তিনি নেই। কিন্তু বাউন্ডারির বাইরে বসে ছায়ায় লুকিয়ে থাকা এই মানুষটি চিরকাল থাকবেন ভারতীয় স্পিন ইতিহাসের পাতায়—একজন নিঃশব্দ জাদুকর হয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *