সর্বশেষ

আমের বোঁটায় বিস্ময়কর মুকুল

আম গাছে ধরে মুকুল। আর সেই মুকুল থেকেই হয় আম। কিন্তু ফরিদপুরের একটি আম বাগানে দেখা গেছে এক ভিন্ন চিত্র। আম গাছের ডালে নয় বরং গাছের আমের বোঁটার মুখ থেকেই বের হয়েছে অসংখ্য আমের মুকুল। ওই মুকুল থেকেই ধরেছে আমের গুটি! এমনই অবাক করা দৃশ্য দেখা যাচ্ছে ফরিদপুরের ধলার মোড়ের কাছে একটি আম বাগানে। এ খবর জানতে পেরে সেটি দেখতে ছুটেও আসছেন অনেকে।

পদ্মার পারে চরের খাঁ খাঁবিরান জমিতে একসময় সবুজের দেখা পাওয়া ভার। চোখ বুলালে চারদিকে শুধু বালির চর। এমনই একটি পরিবেশে চার বছর আগে স্থানীয় যুবক দুলাল হোসেন রুবেল তার খামার বাড়িতে শখের বসে গড়ে তুলেন ফলজ বাগান। প্রায় শতাধিক আম গাছের সাথে এখানে তিনি আরো কিছু ফলের চারা রোপন করেন। এরইমধ্যে তার এই আমবাগানের গাছগুলো বড় হয়ে ফলবতী হয়ে উঠেছে। এবার তার আমবাগানে ধরেছে প্রচুর আম। তবে সব আমের ভিড়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে আমেরিকান রেড পালমার জাতের একটি আম গাছ। এই গাছের একটি আম বড় হওয়ার পরে সেই আমের বোটার মুখ থেকে নতুন করে বের হয়েছে আবার নতুন মুকুল।

আমবাগানের মালিক দুলাল হোসেন রুবেল বলেন, আমের বোঁটার মুখে আবার নতুন করে মুকুল আসতে দেখে ভিষণ অবাক হয়েছি। আল্লাহ চাইলে সবই পারেন এটি দেখে তাই প্রমাণ হলো আবার। এটি আমার কাছে আল্লাহর একটি নিদর্শন মনে হয়েছে।

রুবেল বলেন, চার বছর আগে রেড পালমার জাতের এই আম গাছটি আমি বৃক্ষমেলা থেকে কিনি। পরের বছরই ফল আসে। আর এবার এলো আম থেকে আসা এই অবাক করা আমের মুকুল।

তিনি জানান, ধলার মোড়ের এই এলাকায় আগে আশপাশে কোনো সবুজ ছিল না। এই জায়গটি ছিল ২০ ফুট গভীর। চার বছর লেগেছে আমার এই বাগানটি দাড় করাতে। আলহামদুলিল্লাহ, এখন বাগানটি সবুজে ভরে গেছে। আমাদের এই ধলার মোড়ে আমার এই বাগানটি ছাড়া আশেপাশে আর কোনো সবুজ চোখে পড়ে না।

তিনি বলেন, মূলত পরিবেশের কথা বিবেচনা করেই ৬৯ শতাংশ জমির ওপরে এই খামার বাড়ি গড়ে তুলে সেখানে আম, কলা, লিচু, চালতে, সফেদাসহ নানা ফলমূলের গাছ লাগিয়েছি। এখানে রেড পালমার ছাড়াও মিয়াজাকি, বানানা ম্যাঙ্গো, দেশীয় হাড়িভাঙ্গা, বারি ফোরসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ৯০ টি আম গাছ রয়েছে। সামনের অংশে এবার ড্রাগন ফলের চাষ করছি। এছাড়া কবুতর ও খরগোস পালছি। আগে কিছু গাড়ল ছিল, সেগুলো চরে পাঠিয়ে দিয়েছি।

দুলাল হোসেন রুবেলের সহধর্মিণী সৈয়দা সানজিদা মিশু বলেন, আমের বোঁটা থেকে এভাবে আবার আমের মুকুল ধরতে দেখে ভিষণ অবাক হয়েছি। আর মুকুল থেকে আবার নতুন করে আমের গুটিও এসেছে। আমার কাছে এটি আল্লাহর একটি নিদর্শন মনে হয়েছে। এখন দেখার পালা এই আমের গুটি কতো বড় হতে পারে। যদি সেগুলো পরিপূর্ণ আম হয়ে উঠে তাহলে সেটি হবে আরেকটি বিস্ময়কর ব্যাপার।

তিনি বলেন, আমাদের এই বাগানে নানা জাতের পাশাপাশি রয়েছে বারোমাসি আম। একটি আম শেষ না হতেই সেই গাছে আবার আম ধরতে শুরু করে।

জহুরুল আলম শোভন (৩৫) নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, আমি এই আমের ওপরে মুকুল ধরার খবর জেনে দেখতে এসেছি। এখন মনে হচ্ছে, আমি একটি বিস্ময়কর ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইলাম।

সৈয়দ মোস্তফা আলী নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমার বয়স ৭৬ বছর। আমার এই দীর্ঘজীবনে আমি এমন ফলের গায়ে মুকুল চোখে দেখিনি বা শুনিওনি। সন্ধ্যায় আমি খবরটি শুনতে পেয়ে নিজ চোখে দেখার জন্য এসেছি। আমের বোঁটার ওপরে মুকুল ধরেছে আবার সেই মুকুল থেকে ছোট ছোট আমের গুটি বের হচ্ছে এটি আল্লাহরই একটা নেয়ামত।

এ ব্যাপারে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক দেব নারায়ণ রায় বলেন, উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে বলা হয় এমব্রায়োজেনোসিস (embryogenesis), যাকে বাংলায় বলা হয় বহুভ্রুণিতা। এটি একটি ভ্রূণজনিত প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ভ্রূণের গঠন ও বিকাশ হয়। অনেকসময় অতিরিক্ত ফলনের জন্য অতিরিক্ত মাত্রায় হরমোন প্রয়োগ করা হলে এমনটি ঘটে থাকে।

দুলাল হোসেন রুবেলের এই আম বাগানটির আশপাশে দেখতে পাওয়া যায় অনেকগুলো ইটের ভাটা। দুলাল হোসেন রুবেল নিজেও একজন ইট ভাটা ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। এলাকার উদ্যোমী ও পরিশ্রমী যুবক হিসেবে তার পরিচিত রয়েছে। চরের বুকে এসব জমি বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকে। সেখানে বন্যায় ভেসে আসা পলিমাটি দিয়ে জমি উঁচু করে তার এই বাগান তৈরির প্রচেষ্টা একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। এছাড়া ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ ও শিল্পায়ণের কারণে অতিমাত্রায় কার্বন নিঃসরণের ফলে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর যেই বিরুপ প্রভাবের পড়ছে, সেক্ষেত্রেও বিরানভূমি জুড়ে এমন সবুজায়ন হতে পারে দৃষ্টান্ত। আর সেই সবুজ বৃক্ষে বিস্ময়কর এমন উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের নমুনা তাদের জন্য হতে পারে অনন্য উৎসাহের কারণও বটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *