সর্বশেষ

মাটির বিস্কুট খেয়ে পেটের ক্ষুধা মেটে তাদের

‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়/ পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’ কবি সুকান্তের ভাষায় ক্ষুধিতের যে ব্যথা তার সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা চলে না। পৃথিবীর সর্বত্র রয়েছে কতশত দেশ ও নগর। একেক জীবনের রূপ সেখানে একেক রকম। তবে সবখানেই দারিদ্র্যের কষ্ট একইরকম যন্ত্রণার।

এ প্রকৃতিরই নিয়ম- একদিকে যেমন সভ্যতার ধ্বংস চলে, অন্যদিকে চলে বিনির্মাণ। এ কারণে দেখা যায় কোনো দেশের নাগরিকেরা যখন অর্থ-খাদ্যে সুখে দিন কাটাচ্ছে আবার সেখানেই আছে অনাহারি মুখ। পৃথিবীতে এখনো খাদ্যের সংকট রয়েছে। এই সংকট কাটাতে কতো উপায়ই না খুঁজে ফেরে মানুষ।

ক্ষুধার তাড়নায় জীবন বাঁচাতে মাটি খাচ্ছেন হাইতির অধিবাসীরা। ঘটনাটি রূপকথা নয়। কিউবার পূর্বদিকে ২৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের এই দেশের জনসংখ্যা ১ কোটি দশ লাখ। ইউনাইটেড নেশন-এর ‘ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন’-এর মতে প্রতিদিন বিশ্বে খাবার নষ্ট হয় ১.৩ বিলিয়ন টন। এর বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ ৭৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। হাইতির মানুষের মাথাপিছু আয় ২ ডলারের কম। দেশটির মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমায় বাস করে। পুষ্টিগুণসম্পন্ন ভালো খাবার হাইতির আদিবাসীদের কাছে স্বপ্নের মতো। পেট ভরিয়ে কোনোমতে বেঁচে থাকতে পারলেই তারা তৃপ্ত।

হাইতির ছোটবড় সবাই মাটির বিস্কুট খায়। দেশটির প্লাতেও এলাকায় মেলে এক প্রকার হলুদ মাটি। এই মাটি দিয়ে তৈরি হয় বিস্কুট। তাদের ধারণা এই মাটিতে ক্যালসিয়াম রয়েছে। ফলে কয়েক বছর ধরে সে দেশের গর্ভবতী মহিলাদেরও এই মাটি খাওয়ানো হচ্ছে।

বিশেষ এই হলুদ মাটির সঙ্গে কেউবা সামান্য লবণ, আবার কেউ তেল ও লবণ দিয়ে এক ধরনের মন্ড তৈরি করে। সেই মন্ড দিয়ে বিস্কুটের মতো বানিয়ে রোদে শুকানো হয়। শুকানোর পর সেগুলো খাওয়া হয়।

স্বাস্থ্যের দিক থেকে বিষয়টি মারাত্মক ক্ষতিকর এটি। চিকিৎসকরা বলছেন, মাটিতে হেলমিথ নামক ব্যাকটেরিয়া জন্মে যা অপুষ্টির কারণ। কয়েক বছর আগে এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদক প্রতিবেদন তৈরির সময় খেয়েছিলেন এই বিস্কুট। তিনি লিখেছেন, মুখে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এটি গলে যায়। কিন্তু একটা দীর্ঘসময় শরীর ও জিহ্বায় অস্বস্তিকর অনুভূতি লেগে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *