নিজস্ব প্রতিবেদক: এশিয়া কাপ ২০২৫ ঘিরে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল তাদের স্কোয়াড প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। বিসিবির সিলেকশন প্যানেল, ক্রিকেট অপারেশন্স, টিম ম্যানেজমেন্ট এবং অধিনায়ক মিলে একটি শক্তিশালী স্কোয়াড গঠনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ১৫ সদস্যের তালিকায় ১৪ জন কার্যত চূড়ান্ত হয়ে গেছেন। এখন কেবল একটি পজিশন ঘিরে তৈরি হয়েছে উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিযোগিতা, যেখানে আলোচনায় রয়েছেন তিনজন ক্রিকেটার—সৌম্য সরকার, নুরুল হাসান সোহান ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন।
ওপেনিং ইউনিটে স্থায়িত্ব আনার পরিকল্পনা
দীর্ঘদিন ধরে ওপেনিং পজিশনে পরীক্ষানিরীক্ষা করলেও কাঙ্ক্ষিত ফল আসেনি। এবার সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে স্থায়িত্ব আনতে চাচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্ট। তানজিদ হাসান তামিম ও পারভেজ হোসেন ইমন জুটিকে নিয়েই ওপেনিং কম্বিনেশন নির্ধারণ করা হয়েছে। লিটন দাস থাকছেন ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে, মূলত তিন নম্বর ব্যাটার।
নাইম শেখকে এবার বিবেচনায় আনা হয়নি। আগের কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও ধারাবাহিকতা না থাকায় তাকে স্কোয়াডে রাখার প্রয়োজন দেখছে না টিম ম্যানেজমেন্ট।
মিডল অর্ডারে জায়গা পাকা তিন তরুণের
মিডল অর্ডারে তিনটি পজিশন ইতোমধ্যেই নির্ধারিত হয়েছে। সেখানে জায়গা পেয়েছেন—তাওহিদ হৃদয়, শামীম হোসেন পাটোয়ারী ও জাকের আলী অনিক। হৃদয়ের ধারাবাহিকতা নিয়ে কিছু প্রশ্ন থাকলেও তার আগ্রাসী ব্যাটিং ম্যানেজমেন্টের আস্থা অর্জন করেছে।
শামীম হোসেনের পার্টটাইম স্পিন অপশন এবং পাওয়ার হিটিং ক্ষমতা তাকে এক ধাপ এগিয়ে রেখেছে। জাকের অনিককে ধরা হচ্ছে একজন কার্যকর ফিনিশার হিসেবে। তার স্ট্রাইকরেট এবং লেট মিডল অর্ডারে চাপ সামাল দেওয়ার সামর্থ্য ইতিবাচকভাবে বিবেচিত হয়েছে।
স্পিন ইউনিটে রয়েছে গভীরতা
এশিয়ার কন্ডিশনে স্পিনারদের দাপট বরাবরই লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশ সেই বাস্তবতা মাথায় রেখে তিনজন স্পেশালিস্ট স্পিনার স্কোয়াডে রেখেছে—নাসুম আহমেদ (লেফট আর্ম অর্থোডক্স), রিশাদ হোসেন (লেগ স্পিনার), ও শেখ মেহেদী হাসান (অফ স্পিনার)। এছাড়া শামীম হোসেন নিজেও কার্যকর পার্টটাইম স্পিনার হিসেবে কাজ করতে পারেন।
মেহেদী হাসান মিরাজ , যাকে নিয়ে আগে কিছু আলোচনা ছিল, তাকে স্কোয়াডে রাখার সম্ভাবনা আপাতত নেই।
পেস ইউনিট নিয়ে ভাবনা বাড়ছে
পূর্ব পরিকল্পনায় পেস বিভাগে পাঁচজন ক্রিকেটারকে রাখা হচ্ছিল—মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম এবং তানজিম হাসান সাকিব। তবে এখন সেই পরিকল্পনায় পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কারণ, সৌম্য, সোহান ও অঙ্কনের মধ্যে যদি দুজনকে নেওয়া হয়, তবে একজন পেসারকে স্কোয়াড থেকে বাদ দিতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে বাদ পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব অথবা শরিফুল ইসলাম। নির্বাচকরা মনে করছেন, আরব আমিরাতের কন্ডিশনে স্পিনাররাই বড় ভূমিকা রাখবেন, ফলে অতিরিক্ত পেসার রাখার প্রয়োজন হবে না। শামীম হোসেনের পার্টটাইম স্পিন এবং স্পিন আক্রমণের গভীরতা এই সিদ্ধান্তকে উৎসাহিত করছে।
ত্রিমুখী লড়াইয়ে কারা এগিয়ে?
শেষ পজিশন ঘিরে তিন ক্রিকেটার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন—নুরুল হাসান সোহান, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন এবং সৌম্য সরকার। এর মধ্যে সৌম্য সরকারের সম্ভাবনা কার্যত শেষ। ব্যাকআপ ওপেনার না রাখার সিদ্ধান্ত এবং মিডিয়াম পেস অলরাউন্ডার হিসেবে সাইফউদ্দিনের অন্তর্ভুক্তি তাকে স্কোয়াড থেকে ছিটকে দিয়েছে।
সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন উইকেটকিপার ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান। তার অভিজ্ঞতা, ফিনিশিং সক্ষমতা এবং সাম্প্রতিক গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স নির্বাচকদের দৃষ্টি কেড়েছে। গ্লোবাল লিগে তিনি ৩০০+ রান করেছেন, লো স্কোরিং ম্যাচে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন এবং ফাইনালে দলকে পৌঁছে দিয়েছেন।
তবে এখানেই শেষ নয়। মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনও আলোচনা থেকে ছিটকে পড়েননি। বিপিএলে ১৭৫ স্ট্রাইকরেটে ৩০০+ রান করা এই তরুণ উইকেটকিপার ব্যাটার দারুণ ছন্দে আছেন। যদিও নির্বাচক প্যানেল এখনো তাকে মূল বিবেচনায় রাখছে না, তবু ‘এক্স ফ্যাক্টর’ হিসেবেও তাকে দলে দেখা যেতে পারে।
সম্ভাব্য ১৫ সদস্যের স্কোয়াড:
বিভাগ ক্রিকেটার
ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন
ওয়ান ডাউন লিটন কুমার দাস
মিডল অর্ডার তাওহিদ হৃদয়, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, জাকের আলী অনিক
উইকেটকিপার ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান / মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন / সৌম্য সরকার
স্পিনার শেখ মেহেদী হাসান, নাসুম আহমেদ, রিশাদ হোসেন
পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম / তানজিম হাসান সাকিব
বাংলাদেশের এশিয়া কাপ ২০২৫ স্কোয়াড প্রায় গুছিয়ে ফেলা হয়েছে। ১৪ জন নিশ্চিত হলেও শেষ একটি পজিশন নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। উইকেটকিপার ব্যাটার হিসেবে সোহান এগিয়ে থাকলেও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের পারফরম্যান্স চোখে পড়ার মতো। একাধিক ফ্যাক্টর বিবেচনায় একজন পেসার বাদ পড়ে যেতে পারেন। এখন দেখার বিষয়, দলীয় ভারসাম্য বজায় রাখতে নির্বাচকরা কী সিদ্ধান্ত নেন। কারণ, এই একটি সিদ্ধান্তই বাংলাদেশ দলের এশিয়া কাপ ভাগ্য নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।