সিনেমায় সুযোগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মডেলকে বারবার গ;-ণ-;ধ-;র্ষ-;ণ

ফের শিরোনামে দক্ষিণ কলকাতার কসবা। কয়েক মাস আগেই আইন কলেজে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগে তোলপাড় হয়েছিল এই অঞ্চল।

সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের উঠে এলো এক ভয়ঙ্কর অভিযোগ। এক তরুণী মডেল পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন— তাঁকে সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে একাধিকবার গণধর্ষণ করেছে দুই যুবক। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কলকাতা জুড়ে।

পুলিশের বক্তব্য

কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান রূপেশ কুমার জানিয়েছেন—
“সোমবার রাতে কসবা থানায় এক তরুণী মডেল অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে দুই যুবকের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।”

পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত দুই যুবকের পরিচয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, তাঁদের দাবি অনুযায়ী টলিউড বা বলিউডের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রয়েছে কি না, তাও যাচাই করা হচ্ছে।

অভিযোগের বিস্তারিত

তরুণী জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলাপ হয় তাঁর সঙ্গে অভিযুক্ত দুই যুবকের। ধীরে ধীরে সম্পর্ক তৈরি হয়। যুবকরা নিজেদের সিনেমার প্রযোজক হিসেবে পরিচয় দিতেন। বলতেন, তাঁরা টলিউড-বলিউডের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন এবং চাইলে সুযোগ করে দিতে পারবেন।

বিশ্বাস অর্জনের জন্য তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হতো বিভিন্ন ফিল্মি পার্টিতে। তারপর ধাপে ধাপে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁকে কসবায় একাধিক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ, সেখানেই বারবার তাঁর উপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়।

প্রতারণার শিকার মডেল

প্রথমদিকে সবকিছু স্বাভাবিক মনে হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওই তরুণী বুঝতে পারেন— তিনি প্রতারিত হয়েছেন। অভিযুক্তদের কেউই প্রযোজক নন। বরং তাঁরা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে কোনও যোগসাজশ রাখেন না।

এরপর তরুণী বারবার তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু অভিযুক্তরা ধীরে ধীরে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেন। বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত তরুণী পুলিশের দ্বারস্থ হন।

মেডিক্যাল পরীক্ষা ও তদন্ত

পুলিশ সূত্রে খবর, ওই তরুণীর মেডিক্যাল পরীক্ষা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। তদন্তকারীরা সমস্ত প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি অভিযুক্ত দুই যুবকের নামে আইপিসির ৩৭৬(ডি) ধারায় গণধর্ষণের মামলা রুজু হয়েছে।

কসবা আবার নজরকাড়া

কিছুদিন আগেই এই একই অঞ্চলের আইন কলেজে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ফের একই ধরনের ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

বিনোদন জগতের ছায়া?

ঘটনার সবচেয়ে বড় দিক— অভিযুক্তরা নিজেদের সিনেমা জগতের প্রযোজক দাবি করলেও, তাঁদের আসল পরিচয় এখনো রহস্যে ঢাকা। তদন্তকারীরা খুঁজে দেখছেন, বিনোদন জগতের কারও সঙ্গে তাঁদের সত্যিই কোনও যোগাযোগ ছিল কি না।

তবে পুলিশের মতে, অনেক সময় এই ধরনের প্রতারণা হয় ভুয়ো পরিচয়ের মাধ্যমে। ‘গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রির লোভ দেখিয়ে তরুণীদের শিকার বানানো হচ্ছে’— এমন অভিযোগ আগেও উঠেছে। এবার কসবায় সেটাই আবার প্রমাণিত হলো বলে মনে করছেন অনেকে।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে। অনেকেই লিখছেন—
“ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ দেওয়ার নাম করে তরুণীদের এভাবে প্রতারিত করা অমানবিক।”
আবার অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন— কেন এত বছর ধরে ভুয়ো প্রতিশ্রুতির ফাঁদে মানুষ পা দিচ্ছে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *